গাজী জয়নাল আবেদীন, রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের রাউজানে একই মায়ের পেটের ছোট ভাইদের হাতে বড় ভাই খুন হয়েছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ইয়াসিন নগর গ্রামের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ফকিরটিলা এলাকার তিতা গাজীর বাড়িতে এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম মোঃ নূর আলম বকুল (৪৩)। তিনি পেশায় একজন প্রকৌশলী। হত্যাকাণ্ডের শিকার ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা একই মায়ের সন্তান হলেও বাবা ভিন্ন। নিহত নুরুল আলম ও তার আরেক ভাইসহ তার মা শহীদা বেগমকে নুরুল ইসলাম মুছা বিয়ে করেন। এই সূত্রে সকলেই নুরুল ইসলাম মুছার সন্তান হিসেবে পরিচিত।
খুনে অভিযুক্তরা হলেন আপন মা শহীদা বেগম, মায়ের পেটের ছোট ভাই দিদারুল আলম, নাজিম উদ্দিন, বোন মুন্নি আক্তার, চাচাত ভাই জাগির হোসেন ও জাহিদ হোসেন।
নিহতের ভাই রাজু আহমেদ বলেন, আমরা আড়াইটার দিকে দুপুরে খাবার খাচ্ছিলাম। এমন সময় আমার মা, ছোট ভাই, ছোট বোন ও দুই চাচাত ভাইয়ের সাথে জায়গায় সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তারা লাটি, দা-কুড়াল দিয়ে আমাদের উপর হামলা করে। আমি পালিয়ে বেঁচে গেলে আমার বড় ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে।
নিহতের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী নাসরিন আক্তার লিজা বলেন, আমরা শহর হতে ঈদ উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। যখন বাড়িতে আসি তখন তারা কেউ ছিল না। আড়াই দিকে খাবার খাওয়ার সময় হঠাৎ করে আমার শাশুড়ি, দুই দেবর ও ননদ এসে বলেন, এই বাড়ি আমাদের। আপনারা পাবেন না। ছেড়ে দেন। ননদ মুন্নি বলে উঠেন এটা আমার বাবার সম্পত্তি। তোমরা পাবে না। তখন আমার ভাসুর বলেন, বাবা এখনও জীবিত আছে। বাবাকে ডেকে নিয়ে আস। কে পাবে কে পাবে না তখন বুঝা যাবে। এটার বলার পর তারা লাটি, দা, লোহার রড, কুড়াল দ্বারা আমার স্বামী ও ভাসুরের উপর হামলা চালায়। আমার স্বামী পালিয়ে গেলেও আমার ভাসুরকে তারা মাথায় কুপিয়ে কুপিয়ে মগজ বের করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। তিনি আরো জানান, বিগত দুই বছর ধরে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য জহির আহমেদ বলেন, নুরুল আলম নামের যিনি নিহত হয়েছেন তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার। তিনি নুরুল ইসলাম মুছার স্ত্রীর আগের স্বামীর সন্তান। মুছার পরিচয়ে বড় হলেও তিনি মুছার সন্তানদের ভরনপোষণসহ নানা ভাবে আর্থিক সহযোগিতা করতেন। আজ সামান্য সম্পত্তির জন্য তারাই তাকে মেরে ফেলেছে। এই ঘটনাটা হলদিয়ার জন্য কলঙ্কজনক।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পারিবারিক সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারার বিরোধের জেরে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। হত্যায় ব্যবহৃত দেশীয় তৈয়ারী দা, কুড়াল, লাঠিসোঁটা ও কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ ফাঁড়ির জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, গুরুতর জখম অবস্থায় নুরুল আলম নামের একজনকে নিয়ে আসেন। জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জরুরি বিভাগে লাশ ঘরে মরদেহ রাখা হয়েছে।