সর্বশেষ

প্রশাসনিক জটিলতায় মুখ থুবড়ে পড়ল আন্তঃবন্দর কন্টেনার চলাচল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহনের খরচ কমানো ও বন্দর ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য আনতে চট্টগ্রাম-মোংলা রুটে কন্টেনার জাহাজ চলাচলের একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র দুটি ভয়েজ চালানোর পর শুল্ক বিভাগের জটিলতার কারণে থমকে গেছে সেই সম্ভাবনাময় যাত্রা।

চট্টগ্রামভিত্তিক শিপিং কোম্পানি দ্য সি গ্লোরি দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এই রুটে কন্টেনার জাহাজ চালু করে। পরিকল্পনা ছিল চট্টগ্রাম থেকে খালি কন্টেনার মোংলা বন্দরে পাঠানো হবে এবং সেখান থেকে রপ্তানিযোগ্য পণ্য বোঝাই কন্টেনার নিয়ে জাহাজ ফিরে আসবে চট্টগ্রামে, যেখান থেকে তা রপ্তানি হবে বিশ্ববাজারে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুটি পরীক্ষামূলক ট্রিপে মোট ২০০টি খালি কন্টেনার মোংলায় পাঠানো হয়। এরপরই থেমে যায় এই কার্যক্রম। সি গ্লোরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহির উদ্দিন জুয়েল বলেন, “আমরা বড় পরিসরে এই রুটে কন্টেনার চলাচল চালু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শুল্ক বিভাগ যেসব জটিল শর্ত দিয়েছে, তাতে তা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি।”

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা, দীর্ঘদিন ধরে কাঙ্ক্ষিত ব্যবহার থেকে বঞ্চিত। উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অবকাঠামো সংস্কার হলেও বছরের পর বছর ধরে বন্দরে কন্টেনার জাহাজের সংখ্যা একেবারেই কম। বর্তমানে গড়ে প্রতি মাসে একটিরও কম কন্টেনার জাহাজ আসে। খালি কন্টেনারের স্বল্পতার কারণে রপ্তানি কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে কন্টেনার পরিবহনের সক্ষমতা থাকলেও প্রশাসনিক ও নীতিগত কাঠামোর আধুনিকায়ন না হওয়ায় সেই সুবিধা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। উদাহরণ হিসেবে তারা তুলে ধরেন চট্টগ্রাম-পানগাঁও রুটকে, যেখানে কার্যকর কাঠামো থাকায় নিয়মিতভাবে কন্টেনার জাহাজ চলাচল করছে।

চট্টগ্রাম-মোংলা রুট সচল হলে কেবল মোংলা বন্দরের ব্যবহার বাড়বে না, চট্টগ্রাম বন্দরের ওপরও চাপ কমবে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতের মাতারবাড়ী বন্দরের কার্যক্রমের জন্য এটি একটি কার্যকর রোল মডেল হিসেবে কাজ করতে পারত। এতে খুলনা অঞ্চলের মাছ, হিমায়িত খাদ্য ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বহুগুণে বাড়তো।

তবে সেই সম্ভাবনার দরজা খুলতে হলে জরুরি ভিত্তিতে শুল্ক প্রক্রিয়া সহজীকরণ, নীতিমালার হালনাগাদ এবং আন্তঃবন্দর কন্টেনার পরিবহনের জন্য একটি আধুনিক ও মানসম্মত কাঠামো গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

একজন শিপিং বিশেষজ্ঞ বলেন, “শুধু অবকাঠামো থাকলে হবে না, প্রয়োজন প্রশাসনিক সক্ষমতা ও নীতিগত সমন্বয়। নয়তো এমন উদ্যোগ একের পর এক মুখ থুবড়ে পড়বে।”

spot_img
spot_img

সর্বশেষ

সময়ের সেরা