চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ কমেছে বাংলাদেশে। অর্থাৎ, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সময়ে। পাশাপাশি কমেছে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণও, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।
রোববার (১৩ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত ‘ব্যালান্স অব পেমেন্ট’ সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের পরিবর্তনের পর প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যেসব রপ্তানির টাকা দেশে আংশিক আসত, এখন তা পুরোপুরি আসছে। অপরদিকে, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রিত থাকায় বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতিও কমেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) বাংলাদেশ ৪ হাজার ৮৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যেখানে আমদানি হয়েছে ৬ হাজার ২৫ কোটি ডলারের পণ্য। এর ফলে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৩৮ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২ হাজার ২২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতি ৪.১৭ শতাংশ কমেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি এখন ৪৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের (২০২৩-২৪) ৬১১ কোটি ডলারের তুলনায় অনেক কম। সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যেও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে গত বছরের মে পর্যন্ত যেখানে ঘাটতি ছিল ৫৮৮ কোটি ডলার, সেখানে এবার তা কমে হয়েছে মাত্র ১১৫ কোটি ডলার।
জুলাই থেকে মে এই ১১ মাসে প্রবাসীরা মোট ২৭.৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮.৭ শতাংশ বেশি। আগের বছরে এই পরিমাণ ছিল ২১.৩৭ বিলিয়ন ডলার।
দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে বাংলাদেশে এসেছে ১৫৮ কোটি ডলারের এফডিআই, যা আগের বছরের ১৩৫ কোটি ডলারের চেয়ে বেশি।
তবে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) এখনও নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে নেট বিদেশি বিনিয়োগ থেকে ১ কোটি ৩২ লাখ ডলার প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগের বছর এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৭ লাখ ডলার।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বৈদেশিক লেনদেনের এই উন্নতি সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তবে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ফেরাতে আস্থা অর্জনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।


